“জীবনঘাতী ক্যান্সার ও যে কোন জটিল শারিরীক রোগ হতে পারে বিষন্নতা-র অন্যতম কারন”

অধ্যাপক ডঃ এম. এস. কবীর জুয়েল।

ক্যান্সার_পরবর্তী_মানুষটির_আত্মহত্যায়_প্রকাশ_পেয়েছে_আমাদের_মানসিক_স্বাস্থ্য_সচেতনতার_করুন_চিত্র

আজ ৪ঠা জানুয়ারী “বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনতা দিবস”;
বরাবরের মতোই কিছু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে এ দেশে দিনটি শেষ হয়েছে, সাধারণ মানুষের চেয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষগুলোর অন্তমূর্খী ও বহঃমূর্খী চাপ সামলানোর ক্ষমতা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়, ফলে উন্নত বিশ্বে প্রতিটি ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে সাক্ষাৎ বাধ্যতামূলক, হতাশায় নিমজ্জিত হতে শুরু করার আগেই বিষন্নতা প্রতিরোধক ঔষধ সেবন বাধ্যতামূলক সেই সাথে ব্যক্তিগত সাইকোথেরাপি (Individual Psychotherapy) ও ফ্যামিলি পর্যায়ে(Systemic Family Therapy) কাউন্সিলিং চলতে থাকে; আমাদের দেশে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের Chemotherapy ও Radiotherapy শুরু করার পর তার মানসিক দিকটি এখনো উপেক্ষিত; ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ হয়তো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর কিছুটা উপদেশ দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন কিন্তু আমাদের Stigmatized Society – এর একটা বড় অংশ কোনক্রমেই এটাকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনা, তাদের মাত্র ৫-১০% মানসিক বিভাগে দেখাতে নিয়ে আসে।
এর ফলশ্রুতিতে ক্যান্সার এর মতো ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পেলেও বিষন্নতাসহ নানারকম মানসিক রোগে তারা ভূগতে থাকেন।
সম্প্রতি নিজ বাড়িতে একাকী থাকা একজন ষাটোর্ধ ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে এসে নিজ পিস্তল দিয়ে নিজেকে আত্মহননের মাধ্যমে তার জীবনাবসান ঘটান, কিছু দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমের অনেকেই এ ক্ষেত্রে কেবল তার একাকীত্ব-কে দায়ী করছে, বিষয়টি কেবল এমন নয়, ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ এর মানসিক দিকটি আরো অধিক আলোচনায় আনা প্রয়োজন ছিলো, বাইরের দেশগুলোতে ক্যান্সার বা জীবনঘাতী প্রতিটি রোগ হতে পরিত্রানের পর মানুষটিকে স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে একটি ছন্দাবদ্ধ রুটিন তৈরি করে দেয়া হয়, যার Encored Theme হলো–
Overcoming the — ‘Feeling of Insecurity’, ‘Self Doubt’, Pessimism & Imposter Syndrome…
অর্থাৎ তার মাঝের ‘নিরাপত্তাহীনতাজনিত অনুভূতি’-কে পরিবর্তন করে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা হয়, তার নিজের সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণাকে বদলে দিয়ে তাকে অধিক আশাবাদী করে তোলা হয়, নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে যুক্তি দিয়ে ইতিবাচক দিকে ধাবিত করা হয় এবং নিজ অক্ষমতার আক্রোশকে পরিবর্তিত করে ক্ষমতাবান ভাবতে শেখানো হয়, এতে তার মানসিক শক্তি বেড়ে ওঠে।

মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনে টানাপোড়েন লেগেই থাকে, শুধু আমাদের মতো মধ্য আয়ের দেশ নয়, সর্বোন্নত দেশগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজমান, সুতরাং বাস্তবতার নিরিখে আমাদের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে অধিক খেয়াল রাখতে হবে, বিশেষ করে এই অতিমারী( Pandemic situation) –তে আমরা তাদের ঘরবন্দী করে ফেলেছি, মহামারী হতে বাঁচাতে অধিক সতর্কতাহেতু তাদের নিত্য দিনের রুটিন বদলিয়ে খাঁচাবদ্ধ পাখিতে পরিণত করেছি, তারা সকালে বাহিরে হাটতে যেতে পারেনা, আত্মীয় বন্ধুদের সাথে ভাব বিনিময়ের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেনা, সেইসাথে যদি নিঃশব্দ নিভৃত ক্যন্সার পরবর্তী একাকীত্ব যোগ হয়, তাহলে Self esteem বা আত্মপ্রত্যয় তো এক্কেবারেই কমে যাওয়ার কথা, উক্ত ভদ্রলোকের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমিয়ে আনতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবশ্যই ঊর্ধ্বে স্থান দিতেই হবে।

Leave a Comment