বরিশালের ‘ডেউয়া’-র কাছে আমেরিকান ‘চেরী’ ফলের নির্মম পরাজয়।
অধ্যাপক ডঃ এম এস কবীর জুয়েল।
রেজওয়ানা কাদরী ম্যাডামের সাথে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মানসিক বিভাগে আমার চাকুরী জীবনের প্রায় ৫ বছর(২০০৩-২০০৭) কাটিয়েছি; বার বার মনে পড়ছে তার শ্রদ্ধাস্পদ মুখখানী, জুনিয়র কলিগ হিসেবে যথেষ্ট সহযোগীতা পেয়েছিলাম; তিনি নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী ও আত্মনিবেদিতপ্রাণ সাইকিয়াট্রিস্ট ছিলেন, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রথম সারির কয়েকজনের মধ্যে তিনি অন্যতম; মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নকল্পে অনেক কিছুই করার পরিকল্পনা নিয়ে সুদূর আমেরিকা থেকে সাইকোথেরাপিতে বিশেষ ট্রেনিং শেষে নিজ দেশে ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু পেশাজীবি সংগঠনগুলোর সংকীর্ণতা আর নিজ সহগামীদের পেশাগত হিংসে বিদ্দেষের শিকার হয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন তিনি; ক্ষণিকের অতিথি হয়ে আমরা এ ধরা-য় আসি কিন্তু তবুও কতো রেশারেশি, কতো মিছে প্রতিযোগিতা, অথচ সব কিছুর অবসান হয়ে যায় জীবন সায়াহ্নে, ফরেন ট্রেনিং কালে তিনি কয়েক মাস বেশী আমেরিকায় অবস্থান করেছিলেন, সেটা পেশাগত কারনেই, খুব সহজেই তা ভূতাপেক্ষিকভাবে ‘বিনে বেতনে ছুটি(Leave without Pay)’ দেখিয়ে সমাধান করা যেতো, অথচ সে সময় তার চাকুরী জীবনকে অনিয়মিত করে দেয়া হয় এবং তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়; সে আমলে এখনকার মতো প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের তেমন প্রসার ছিলো না, ফলে সরকারী চাকুরী বিধির অসততা(প্রমর্জনা-র পদোন্নতি)-কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বেসরকারীতে বৈকালিক বা সান্ধ্যকালীন অধ্যাপক হওয়ার রীতি তখনো চালু হয়নি। আর ম্যডাম অতোটা কৌশলীওছিলেন না, সত্য-কে মহাসত্য বলতেন আর মিথ্যেকে প্রচন্ড ঘৃণা করতেন, খুব স্পষ্টভাষী। ফলে কূটকৌশলী সহগামী আর মন্ত্রণালয়ের অলীক বিধিমালার গেঁড়াকলে আটকে যান, আর সে সুযোগটি নিয়ে নেয় সুযোগ সন্ধানীর দল।
এক কালের সহকর্মীদের বিষয়ে আক্ষেপ নিয়ে প্রায়ই আমাকে বলতেন, ওরা কেন এমন করছে? জুয়েল ! তোমার কি মনে হয়? প্রত্যুত্তরে বলতাম ম্যাডাম সব ঠিক হয়ে যাবে আপনি ধৈর্য্য ধরুন, এরপর আমি লীয়েন নিয়ে Consultant Psychiatrist হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাই কয়েক বছরের জন্য, ফিরে এসে দেখি ম্যাডাম পূর্বাবস্থায়-ই রয়ে গেছেন। ম্যাডামের সাথে আমার আর দেখা করতে যাওয়া হয়নি, হয়তো অবচেতন মনেই তা হয়ে ওঠেনি। নিজ পেশার মানুষদের প্রতি এক রাশ বিরক্তি নিয়ে অনেকটা নিরবে নিভৃতেই চলে গেলেন এই প্রথিতযশা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন; আমিন।
ইন্না-লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।।।।